নদী ভাঙ্গন ও চর অঞ্চল মানুষদের নিয়ে আমাদের কিছু কথা
আমার নামটি! ভাই আমার নামটি আগে। না আমার নামটি আগে লেখেন! উপকুলের দ্বিপ চরে সাহায্য ভাতা নামের তালিকা সংগ্রহ করতে গেলে এ এক স্বাভাবিক চিত্র। অসংখ্য নারী পুরুষ ও শিশুর জটলা। চারিদিকে গোল হয়ে দাঁড়ানো মানুষ গুলোর মাঝখানে আমরা Asman Foundation কর্মীরা নামের তালিকার পাতার পর পাতা লিখে চলি। তবুও নাম লেখা শেষ হতে চায় না। কেউ কেউ জাতীয় পরিচয়পত্র এগিয়ে ধরেন চোখের সামনে হয়তো বাড়ির পুরুষ লোকটি নেই; তাই ঘরে থাকা নারী এগিয়ে আসেন নাম লেখাতে নিজের নামটি না বলে স্বামীর নামটি বলেন। ছেলে বাড়িতে না থাকলেও হাপাতে হাপাতে ছুটে এসে মা তার ছেলের নামটি বলতে কোনক্রমে ভুল করেন না। সাহায্য কিছু পাবে কিনা, সেটা পরের কথা; নাম লেখাতেই চর অঞ্চল ও নদীভাঙ্গন মানুষের আগ্রহটা প্রবল। আমরা বিরক্ত হই না! নাম লিখে চলি একে একে নামের তালিকায় এই মানুষগুলো নাম লেখানোটাই যেন বড় সস্তির। নাম লেখার ফলে কিছু সাহায্য এলে এরা অন্তত বাদ পরবে না- এমনটাই সবার ধারনা। বার বার ঝড় ঝাপটায় বিপন্ন-বিপর্যস্থ মানুষ গুলো কিছু একটা পাওয়ার আসায় ছুটে চলেন এক স্থান থেকে আরেক স্থানে। নদী ভাঙ্গনে বাড়ি-ঘর চলে যায়; সম্পদশালী মানুষ গুলো পথে বসে। তবুও তাদের মাথা গোজার সুযোগ দিতে কেউ এগিয়ে আসে না। এই মানুষগুলোর কানের কাছে গিয়ে কেউ বাসস্থান খাদ্য সংকটের আলাপ তুললে কেন তারা একসাথে নাম লেখাতে চাইবেন না? চাইবেন এটাই স্বাভাবিক। স্বেচ্ছাসেবক, এনজিও তারা বোঝেন না। তারা বোঝেন যেটাই হোক না কেন; তালিকায় নাম ওঠানোটাই জরুরি। ঘর হারা মানুষের সঙ্গে আলাপে জানতে পারি এক জীবনে সর্বচ্চ ১৪ বার পর্যন্ত বাড়ি বদলেছেন। তবুও আসেনি স্থিতিশীলতা নানামুখী দূর্যোগে বিপন্ন উদ্বাস্থ মানুষেরা। এখন আর কোথাও যাওয়ার স্থান পাচ্ছে না। নদীভাঙ্গন গ্রস্থ মানুষের স্থানচ্যুতির এই বিষয় গুলো জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পৃক্ত। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উপকূল জুরে এই যে ওলটপালট; এর ফলে নিঃস্ব মানুষের মিছিল দীর্ঘ হচ্ছে। নিঃস্ব মানুষগুলোকে মাথা গোজার ঠাঁই করে দিতে হলে সবার আগে আমাদের সবাইকে সহায়তার হাত বারিয়ে দিতে হবে।